রোজকার খাদ্য তালিকায় যে খাবারগুলো রাখলে লিভার ভাল রাখতে ওষুধের প্রয়োজন হবেনা
লিভার ভাল রাখতে বাজারে কত ধরনের ওশুধইনা আছে। কিন্তু কিছু খাবার নিয়মিত খেলে আলাদা করে ওষুধ খাওয়ার দরকার পড়বে না। সে খাবারগুলি কী কী তাই জানিয়ে দিলেন বিশিষ্ঠ ডায়েটিশিয়ান অরিজিৎ দে।
লিভারে ফ্যাট জমে অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়া, খারাপ কোলেস্টেরল (LDL)-এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL)-এর পরিমাণ কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন পদ্ধতি, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেটের বিপাকে সমস্যার কারণে। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে, ফ্যাটি লিভারের সমস্যাকে কমিয়ে এনে লিভারের জন্য একটি সুরক্ষাকবচ তৈরী করা যায় দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালী ও কিছু খাদ্যকে দৈনন্দিন ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত ও বর্জনের মাধ্যমে।
চলুন জেনে নেই কোন খাবারে কী গুণ
রসুন- বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, লিভারে ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে গড়ে ১৫ সপ্তাহ নিয়মিতভাবে রসুন খেলে; এতে লিভার এনজাইমের মাত্রার ব্যালান্স থাকে ও ফ্যাটি লিভার কন্ডিশনের মাত্রা কম হয়।
গ্রিন টি, কফি- চিনি ছাড়া সারাদিনে দু’কাপ গ্রিন টি অথবা কফি’র যেকোন একটি পান করলে এদের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের ক্ষতিকারক এনজাইমের মাত্রাকে নষ্ট করে ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
ওটস অর্থাৎ ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য ও জটিল
শর্করা যা পেট ও লিভারে ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
সয়াবিন ও সয়াবিন জাতীয় অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে conglycenin নামক প্রোটিন থাকে, যা ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করে।
আবার ওটসের বদলে লাল চাল, গমের আটা, ডালিয়া ইত্যাদিও খাওয়া
যেতে পারে।
ব্রোকোলি, পেঁপে ও কাঁচা হলুদ- সবুজ শাকসবজি, পেঁপে ও যেকোন ধরনের লেবু ফাইবারযুক্ত ও কম ফ্যাটযুক্ত হয়। আর এগুলি ওজন কমাতে কার্যকর ভুমিকা রাখে। কাঁচা হলুদ ও ব্রোকোলি আরও উপকারী, কারণ এগুলি লিভার সেলে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়।
ওমেগা-৩ যুক্ত এই ধরনের খাবারগুলো লিভার ইনফ্ল্যামেশন কমায়, ব্যালান্স করতে সাহায্য করে লিভারের ফ্যাট লেভেলকে, সাহায্য করে লিভারের এনজাইমগুলির মাত্রা বজায় রাখতে। এই ধরনের খাদ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে- সামুদ্রিক মাছ যেমন- স্যালমন ফিশ, টুনা ফিশ, ফ্ল্যাকসিড, বাদামের মধ্যে আমন্ড, ওয়ালনাট, অলিভ অয়েল, চিয়াসিড, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি।
·
চলুন জেনে নিই অরিজিৎ দের ডায়েটের গাইডলাইনে
কি আছে-
·
সকালে: আমন্ড এবং ব্ল্যাক কফি
·
প্রাতঃরাশ: ওটস অথবা ডালিয়া
·
বেলায় ১০টা -১১টা: ফল
·
দুপুরে: ভাত, ডাল, সবুজ সবজি, ছোট মাছ
এবং রসুন
·
বিকেল ০৪টা: টক দই (লো ফ্যাট)
·
সন্ধে ৬টা: ওয়ালনাট ও গ্রিন টি
·
রাত ৮টা: সিবাম ভেজিটেবল (স্যুপ অথবা
স্টু)
·
রাতে: রুটি আর সয়াবিনের তরকারি
·
ঘুমনোর আগে: চিয়াসিড ও ফ্ল্যাক্সসিড-এর
শরবত।
এবার
জেনে নেই অরিজিৎ দের মতে যা খাওয়া যাবেনা-
· সঠিক খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে, কিছু কিছু খাদ্য আমাদের বর্জনও করতে হবে। যেমন- কমিয়ে দিতে হবে সহজ শর্করা জাতীয় খাবারগুলো।
· বর্জন করতে হবে চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক,
আইসক্রিম, বেকারীর খাবার, অ্যালকোহল, কাঁচা লবণ, তেলেভাজা খাবার, রেডমিট, বাঃটার, নারকেল, সরষেবাটা, ঘি-চর্বিযুক্ত মাছ, বাটার,অ্যাডেড
সুগার ইত্যাদি খাবারগুলো।
· এসব ছাড়াও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের
মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা অনেকাংশেই কমিয়ে বা
নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যদি ১০% সামগ্রিক ওজন
কমানো যায়, তবে ৩-৫% কমানো যায় ফ্যাটি লিভারের পরিমাণ।
আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো শেয়ার করে নিজে ভালো থাকি এবং ভালো থাকতে উদ্ভোদ্য করি।
কোন মন্তব্য নেই