রক্তের ক্যানসার সারে হীরকভস্মে সারে! চাঞ্চল্যকর এই দাবি করছেন বিজ্ঞান গবেষকরা
সাতশো ডিগ্রি সেলসিয়াসে হিরে পুড়িয়ে তৈরী ভস্ম
যা দিয়েই কর্কটরোগের (Cancer Disease) নিধন হবে! অবশেষে মান্যতা
পেলো বহু যুগ ধরে চলে আসা এহেন 'রত্নচিকিৎসা'।
ভারতীয় 'ফ্রন্টিয়ারস ইন ফার্মাকোলজি' পত্রিকা গত ১৪
মার্চ এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করার জন্য গ্রহণ করেছে । আর তাতেই
রাজ্য তথা দেশের আয়ুর্বেদমহল উচ্ছ্বসিত। তাদের পর্যবেক্ষণ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা বহু বছর
ধরে ক্যানসার চিকিৎসায় হীরকভস্ম ব্যবহার করে আসছেন। নিরাময় হয়েছে বহু রোগীর;
কিন্তু সেই সত্যিটাকে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি গবেষণাগারে বিজ্ঞানের
নিয়ম মেনে।
এবার একদল চিকিৎসক এবং প্রাণিবিজ্ঞানী সম্মিলিত গবেষণা সেই
পথেই এগোল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমিত হীরা
আছেন যার নেতৃত্বে । সঙ্গী আছেন আরও কয়েকজন- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিনন্দন রেজ
ও অঙ্কুশ পালোধি; শ্যামবাজারের জে বি রায় আয়ুর্বেদ কলেজের ডা. প্রশান্তকুমার সরকার ও ডা.
পুলককান্তি কর; দেবাঞ্জন সরকার ও শঙ্কর ভট্টাচার্য সিধু কানু
বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের; বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির রঞ্জিত
সিং ও পার্থ পি মান্না । অধ্যাপক ড. সুমিত হীরার দাবি, 'মাইস মডেলে'- এ পরীক্ষা করে তারা দারুণ ফল পেয়েছে। তাদের দাবি ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ব্লাড
ক্যানসার বা লিম্ফোমা ক্যানসার সম্পূর্ণভাবে সেরে গিয়েছে আর বাকি ক্ষেত্রে
আয়ুরেখা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণা থেকে জানা যায়, যে ইঁদুরগুলির উপর তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা
চালিয়েছেন সেগুলির গড় আয়ু ছিলো দুই বছর। রক্তের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর
সর্বসাকুল্যে ২০ দিন সেগুলির বাঁচার কথা। কিন্তু সেগুলি সম্পূর্ণ ক্যানসারমুক্ত না
হয়েও ৮০ দিন বেঁচে ছিল হীরকভস্মের দৌলতে। গবেষণায়
উঠে এসেছে আরও একটি বিষয়; তা হল, যে ইঁদুরগুলি সম্পুর্ণ ক্যানসারমুক্ত হয়েছে
সেগুলোর শরীরে পুনরায় লিম্ফোমা ক্যানসার আক্রান্ত কোষ প্রবেশ করানো হলেও
ক্যানসারজয়ী ইঁদুরদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তা রুখে দিয়েছে । আর এই তথ্যই বিজ্ঞানীদের
অথবা গবেষকদের আরও বেশী করে উৎসাহিত করেছে । ড. সুমিতের দাবি, হীরকভস্ম যা ন্যানো
পার্টিকেলে পরিণত ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে একদিন অন্তর অন্তর। দু'টি স্পেলে দশ দিনের ওষুধ প্রয়োগের পর ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে ৬০
শতাংশ ইঁদুরের শরীর থেকে, বাকি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে আয়ুরেখা।
আপনাদের খুব জানতে ইচ্ছা করছে কীভাবে কাজ করল এই ওষুধ? গবেষণাপত্র থেকে জানা গিয়েছে, হীরক পুড়িয়ে তৈরী হীরকভস্ম বাড়াচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তৈরী করছে টিএনএফ আলফা সাইটোকাইন ও মেমোরি টি সেল; যা নিধন করছে ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে। ক্যানসার শরীরের অন্যত্র কোথাও ছড়াতে পারেনা কারণ ম্যাক্রোফাজ বা ডেনড্রাইট সেলকে তীব্রভাবে উদ্দীপ্ত করে। অর্থাৎ হীরকভস্ম রুখে দিচ্ছে মেটাস্টেসিসও আর ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে একেবারেই টিউমারকে গায়েব করে দিচ্ছে টিউমারের আকার দ্রুত কমিয়ে। ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে গবেষকরা এটাও দাবি করছেন। তাদের এই ধরণের গবেষনাকে সাধুবাধ জানিয়েছে, এমেরিকার 'ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট'-এর সদস্য তথা নিউ ইয়র্কের কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের আয়ুর্বেদ ক্যানসার কেয়ার ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারপারসন ডা. ভাস্বতী ভট্টাচার্য। ডা. ভাস্বতী ভট্টাচার্য তাঁর পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করেছে, আয়ুর্বেদের 'রসরত্ন সমুচ্চয়' গ্রন্থে ক্যানসার আক্রান্ত টিউমার বা আয়ুর্বেদের এই চিকিৎসার। আর ইতিমধ্যেই প্রমাণিত এই রত্নচিকিৎসার কার্যকারিতা। গবেষণা থেকে এও বলা হয় সরাসরি 'হিউম্যান মডেল'-এ এ ধরণের গবেষণা চালানো যেত।
কোন মন্তব্য নেই